সোনারগাঁ(নারায়ণঞ্জ) প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বারদী ইউনিয়নের মান্দারপাড়া গ্রামের তিন সন্ত্রাসীর কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ২০ গ্রামের মানুষ। সন্ত্রাসী নুর মোহাম্মদ ওরফে পাগলা, হাবিবুর রহমান হাবু ও ফেলাইনা নামের তিনজন এলাকায় জমি দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হুমকি ও মারধরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। গত ১৭ বছর তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে মানুষ। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে তিন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার থানায় ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদকসহ দেড় ডজন মামলা রয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির নেতাদের কাছ চাঁদা দাবি করে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে তারা। তাদের হুমকিতে অতিষ্ঠ হয়ে বৃহস্পতিবার সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো.সেলিম মিঞা বাদি হয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
জানা যায়, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের মান্দারপাড়া গ্রামের অদুদ বেপারীর ছেলে নুর মোহাম্মদ ওরফে পাগলা, হাবিবুর রহমান হাবু, শুক্কুর আলীর ছেলে ফেলাইনার কর্মকান্ডে ওই এলাকার মছলন্দপুর, সেকের চর, গোয়ালপাড়া, শান্তিরবাজার, মান্দারপাড়া, পাইকপাড়া, নাকুড়িয়াহাটি, চেঙ্গাকান্দি, বাস্তমাবাগ,বাড়ৈপাড়া, বিশনন্দী, লক্ষীবরদী, জয়নগর, খাসেরকান্দিও আলগীর চরসহ বিশ গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাদের ২০-২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে ওই এলাকায় নিরীহ মানুষের জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে তারা এসব করেছে। বর্তমানের ওই এলাকার বিএনপির একটি গ্রæপের ছত্রছায়ায় তারা এসব কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসী নূর মোহাম্মদ ওরফে পাগলার অপরাধমূলক কর্মকান্ডে র্যাবের ক্রসফায়ারে তালিকাভূক্ত হওয়ার কারনে ২০২২ সালে মালয়েশিয়া পালিয়ে যায়। ৫ই আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর নভেম্বর মাসে সে দেশে ফিরে আসে। পুনরায় তার সন্ত্রাসী গ্রুপকে সক্রিয় করে অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর দাবি, তিন সন্ত্রাসীর কর্মকান্ডে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তিন সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে মো. শাওন মিয়া, মামুন মিয়া, ইউনুস মাহমুদ বিজয়সহ কমপক্ষে ৩০জন তাদের অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে থাকে। তাদের বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের কুপিয়ে মারাক্তকভাবে আহত করে। তাদের হামলার শিকার হয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম, ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন ও তার চাচাতো ভাই শরীফ হোসেন, বালু ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া, বারদী ইউনিয়নের ৫নংওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ অর্ধ শতাধিক মানুষ। বর্তমানে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে হুমকি দিয়ে আসছে।
মসলেন্দপুর গ্রামের আশিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের ২০ গ্রামের মানুষ সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনে আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই। তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে এলাকায় হত্যাকান্ড ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো.সেলিম মিঞা বলেন, একটি টিভি চ্যানেলে ডাকাতি, মাদক, ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার কারণে নুর মোহাম্মদ ওরফে পাগলা তাকে বিভিন্ন মোবাইল ফোন থেকে হত্যা ও গুম করার হুমকি দিচ্ছে। তাদের পুরো পরিবার ডাকাতি ও ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে ২০-২৫জনের একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র রামদা, চাপাতি ও হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
অভিযুক্ত নূর মোহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে মানুষ অপ-প্রচার করছেন। কেন এতো গুলো মামলা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে কোন উত্তর দেননি।
সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, তিনজনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগে দেড় ডজন মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন