রিপোর্ট প্রিন্ট

শেয়ার করুনঃ



রেজাউলকে হটিয়ে গিয়াসে ঝুঁকেছেন রেজাউল সমর্থকরা, তৃণমূল বিশ্বাসী মান্নানে

সোনারগাঁ(নারায়ণগঞ্জ)প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সাবেক মন্ত্রী ও সংস্কার পন্থী হিসেবে খ্যাত  রেজাউল করিমকে নিয়ে বিএনপির রাজনীতির মাঠে ব্যর্থ হয়ে এবার জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও একাধিক বিতর্কিত বক্তব্যে সমালোচিত  সাবেক এমপি (সিদ্ধিরগঞ্জ) গিয়াস উদ্দিন'র দিকে ঝুঁকেছে রেজাউলের কর্মী সমর্থকরা। এ নিয়ে শনিবার রাত থেকেই পুরো উপজেলায় হাস্যরসের মেতেছে সাধারণ মানুষ। 

জানা গেছে, শনিবার (২৪ মে) বিকেলে পানাম নগর এলাকায় সোনারগাঁ ট্যুরিস্ট হোমে নারায়ণগঞ্জ-৪ (সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনকে প্রধান অতিথি রেখে একটি আলোচনা সভা করেছেন সংস্কারপন্থী খ্যাত রেজাউল করিমের কর্মী সমর্থকরা।

সেখানে প্রথমে এটি একটি ঘরোয়া মিটিং বলে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি। পরে একাধিক সাংবাদিক অনুষ্ঠানে  উপস্থিত হলে তেমন কোনো বাধা দেয়া হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৭০-৮০ জন লোকের উপস্থিতিতে চোখেমুখে পরাজয়ের গ্লানি-ন্যায় হতাশাগ্রস্ত বক্তব্য দিচ্ছেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। বক্তব্যে তারা অবিভাবকহীন বলে স্বীকার করছেন। সাবেক এমপি ও সংস্কারপন্থী খ্যাত রেজাউল করিমের কথা স্মরণ করে বক্তারা বলেন, ওনাকে একবার পাওয়া গেলেও আরেকবার পাওয়া যায়না। এসময় তারা গিয়াস উদ্দিনকে সোনারগাঁ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জোর দাবী জানান। 

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ-আলম মুকুল বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই গিয়াস সাহেবের সাথে রাজনীতি করে আসছি। এবার নারায়ণগঞ্জ-৩ থেকে আপনাকে নির্বাচন করতে হবে। এখানে যোগ্য লোকের অভাব। সোনারগাঁয়ে আপনার জন্য ১০টি ইউনিয়নে দুর্গ গড়ে তুলবো। এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে পুরো উপজেলায় হাস্যরসে চলে সমালোনা। এর আগে গত ১৮ ই নভেম্বর দেখা গেছে, বেশ ঘটা করে মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় 

শাহ-আলম মুকুলের সভাপতিত্বে রেজাউল করিমকে সভাপতি করে একটি জনসভা করা হয়। যেখানে তাকে সাংসদ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন রেজাউল সমর্থকরা। কিন্তু এবার রেজাউলকে হটিয়ে গিয়াসে ঝুঁকেছেন তারা। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে সোনারগাঁয়ে।  

বিষয়টি  নিয়ে তৃণমূল বিএনপির একাধিক নেতা জানান, গিয়াসউদ্দিন গত ২৮ শে ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বিএনপি দলের বিরুদ্ধে একটি বিতর্কিত বক্তব্য দেন যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও বক্তব্যে তিনি বলেন, বিএনপিতে ‘গণতন্ত্র’ নাই। কেন্দ্র নেতা দেয় আমরা দাসত্ব করি। টাকা হলে মনোনয়ন পাওয়া যায়। বহিষ্কার হতে পারি। আমি কেয়ার করি না'। ব্যাক্তি দলকে নিয়ে এমন বক্তব্য দেন তাকে আমরা কিভাবে নেতা হিসেবে বিবেচিত করবো। উনার এখন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জায়গা নাই তাই সংস্কার পন্থী খ্যাত রেজাউল সমর্থকেরা দিশেহারা হয়ে গিয়াসউদ্দিনকে সোনারগাঁ আনতে ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। 

বিএনপির একাধিক নেতারা আরও জানান, দ্বিধাদ্বন্দে থাকা রেজাউল সমর্থকরা এখন হতাশায় ভুগছেন। কি রেখে কি করবে তারা নিজেরাও জানে না৷ বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের জনপ্রিয়তা দেখে তারা আজ দিশেহারা৷ তাই আর তাদের রেজাউল দিয়ে হবে না৷ নদী পার হয়ে তাই এখন গিয়াস সাহেবকে নিয়ে এসেছে। তারা ভুলে গেছে আগের দিন এখন নাই দেশ এখন বদলেছে 'পুরান পাগলের ভাত নাই নতুন পাগলের আমদানি'। আমরা বিএনপির রাজনীতি করি যে ব্যক্তি বলে বিএনপিতে গণতন্ত্র নাই, তার সোনারগাঁয়ে কোনো ঠাঁই নাই।  

এদিকে সোনারগাঁ বিএনপির পদে থাকা নেতাকর্মীরা জানান,  গিয়াসউদ্দিনকে সোনারগাঁয়ে নিয়ে এসে গুটিকয়েক লোক নিয়ে যে সভা করেছে তা খুবই হাস্যকর। বিএনপির পদ-পদবীহীন লোকেরা আজ আজহারুল ইসলাম মান্নান সাহেবের জনপ্রিয়তা দেখে দ্বিধায় পড়ে গেছে। তাই রেজাউল করিমকে দিয়ে তাদের চলবে না তারা এখন গিয়াসে ঝুঁকেছেন। কিন্তু তারা ভুলে গেছেন মান্নান সাহেব বিএনপির এক নিবেদিত প্রাণ। দলের জন্য যা করেছেন তিনি তা নারায়ণগঞ্জের কোনো নেতাই করেন নি। সোনারগাঁ বিএনপি মান্নানে বিশ্বাসী। 

তবে রেজাউল সমর্থকদের হতাশ করে গিয়াসউদ্দিন সভায় বলেন, আপনারা দাওয়াত দিয়েছেন তাই এসেছি৷  আমি চাই ২০০১ সালের মতো নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসন যেনো বিএনপি পায়। দীর্ঘদিন আমি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে রাজনীতি করেছি। দল যেখান থেকে নমিনেশন দিবে সেখান থেকেই করবো৷ তবে আপনারা আমাকে দাওয়াত দিলে সোনারগাঁ বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে আসবো৷ কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে নয়৷ 

সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শহিদুর রহমান স্বপনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম মাজেদ, সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক আশরাফ প্রধান, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাবেক সদস্য সচিব বাবুল হোসেন বিজয়, যুবদল নেতা এনামুল হক রবিন, মুসা, এমদামুল হক দীপু,আকবর হোসেন ও পাপ্পু প্রমুখ। 


0/আপনার মতামত জানান