রিপোর্ট প্রিন্ট

শেয়ার করুনঃ



রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মাদ্রাসায় জামায়াত নেতার লঙ্কাকাণ্ডের অভিযোগ

সোনারগাঁ(নারায়ণগঞ্জ)প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে কলতাপাড়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার সভাপতি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূ'রা সদস্য ড: ইকবাল হোসেন ভূইয়ার বিরুদ্ধে।  এমন লঙ্কাকাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদ ও সভাপতির পদ বাতিলের দাবীতে মাদ্রাসার সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী, ছাত্র-ছাত্রী ও মাদ্রাসার নির্বাচিত সদস্যবৃন্দ৷ 

মঙ্গলবার(১০ই জুলাই)সকালে উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের কলতাপাড়া এলাকায় সভাপতির পদ বাতিলের দাবীতে এ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

এলাকাবাসী ও নির্বাচিত সদস্যদের অভিযোগের বরাতের মাধ্যমে জানা গেছে, উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কলতাপাড়া ফাজিল মাদ্রাসায় গত ১০ই এপ্রিল নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ১২ই এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দাতা, প্রতিষ্ঠাতা ও অভিভাবক সদস্যসহ  ৯ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। নিয়মানুযায়ী তাদের সকলের সমর্থন কিংবা গোপন ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত করা হবে৷ কিন্তু জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূ'রা সদস্য হওয়ায় ডঃ ইকবাল হোসেব ভূইয়া তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নির্বাহী কমিটির সাথে কোনো আলোচনা না করেই গত ২৪ মে ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমতি ক্রমে রেজিস্ট্রার আইউব হোসেনের সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে সভাপতি পদ নিয়ে আসেন। যা সম্পুর্ন নিয়মবহির্ভূত।  

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, গত ১৫ ই মে প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল আঃ আউয়াল সাক্ষরিত অত্র মাদ্রাসার পেইডে ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) কে সভাপতি করার প্রস্তাব করে আবেদন করা হয়। পরবর্তী এ খবর জানতে পেরে ডঃ ইকবাল মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের কোনো প্রস্তাবনা ছাড়াই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গত ২৪ শে মে সভাপতি পদ ভাগিয়ে নিয়ে আসেন। এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মাদ্রার প্রিন্সিপাল গত ২৬ শে মে  পুনরায় অত্র মাদ্রাসার পেইডে জামায়াত এ নেতার সভাপতি পদ বাতিলের দাবী জানিয়ে পুনরায় আবেদন করা হয়। যার নথি প্রতিবেদকের কাছে বিদ্যমান রয়েছে। 


এ বিষয়ে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মনির হোসেন,অভিভাবক সদস্য সানাউল্লাহ,মোঃ নজরুল ইসলাম,মোঃ আনসার আলী বলেন, ডঃ ইকবাল জামায়াত ইসলামির কেন্দ্রীয় শূ'রা সদস্য হওয়ায় ৫ আগষ্টের পর থেকেই উপজেলায় তার ভাই ও স্বজনদের দিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম ও দখল বানিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন। কেউ কথা বললেই রাজনৈতিক মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের চুপ করিয়ে রাখেন।   তারই ধারাবাহিকতায় ঐতিহ্যবাহী এই মাদ্রাসাটিকে দখলে নিতে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে লিয়াজু করে নির্বাচিত কমিটির সাথে কোনো আলাপ-আলোচনা না করেই রাতের আঁধারে সভাপতি পদ ভাগিয়ে নিয়ে আসেন৷  আমরা এই ঘৃণিত কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।পাশাপাশি এলাকাবাসীসহ আমাদের সকলের একটাই দাবী অবিলম্বে তার সভাপতি পদ বাতিল করা হোক।  


অত্র মাদ্রাসার প্রফেসর ইব্রাহিম মিয়া জানান, জামায়াত নেতা দীর্ঘ দিন ধরেই এই মাদ্রাসাটিকে দখলের পায়তারা করছেন। তিনি আমাদের নির্বাচন না মেনে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আঁতাত করে সভাপতি পদ নিয়ে এসেছেন। আমরা এই মাদ্রাসায় কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির হস্তক্ষেপ চাই না। তাই অবিলম্বে তার সভাপতি পদ বাতিলের আবেদন জানাচ্ছি।

অভিযুক্ত সভাপতি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূ'রা সদস্য ডঃ ইকবাল হোসেন ভূইয়া বলেন, জামায়াত ইসলামী কখনো রাজনৈতিক প্রভাব খাটায় না। আমি কারো মাধ্যমেই সভাপতি পদ নিয়ে আসি নাই। মাদ্রাসায় যে নির্বাচন হয়েছিলো তা পাতানো নির্বাচন ছিলো। অনেক প্রার্থীকে এক শ্রেণির লোক হুমকিসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে সভাপতি করেছেন তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করতে পারেন কেনো আমাকে সভাপতি পদে মনোনিত করা হয়েছে। 

সোনারগাঁ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিয়মানুযায়ী অত্র মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল যে কাউকে সভাপতি করার প্রস্তাব করতে পারেন। কিন্তু এর এখতিয়ার সম্পুর্ন আরবী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কিভাবে উনি সভাপতি হলেন তা আমার জানা নেই৷  তবে যেকোনো কারনেই হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেছেন।  

0/আপনার মতামত জানান